ঐশীর ভাগ্য নির্ধারণ আজ

প্রকাশঃ নভেম্বর ১১, ২০১৫ সময়ঃ ১০:০৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

oishi-rahman-চাঞ্চল্যকর মা-বাবা হত্যা মামলায় ঐশীর ভাগ্য নির্ধারণ করা হবে আজ। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলার প্রধান আসামি তাদের একমাত্র কন্যা ঐশী রহমানের রায় ঘোষণা করা হবে আজ। ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ এই রায় ঘোষণা করবেন এ মামলার ।

গত ৪ নভেম্বর মামলার যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১২ নভেম্বর দিন ধার্য করেন বিচারক।

এদিকে রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ হওয়ার পর অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন মামলার প্রধান আসামি নিহত পুলিশ দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমান।

জানা গেছে, ঐশী রহমানকে আগে স্বাভাবিক দেখা গেলেও কিছুদিন ধরে তার চেহারা বেশ বিমর্ষ। আর দুই বছরের কারাবাসে ঐশীর শরীরে বাসা বেঁধেছে হাঁপানি রোগ।

পুলিশ কর্মকর্তা দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে বড় ঐশী পড়ত ‘এ’ লেভেলে। বাবা-মায়ের আদরের সন্তানটি কখন অসৎ সঙ্গে পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তা জানতে পারেননি তারা। যখন বুঝতে পারলেন তখন ঐশীর ওপর নজরদারি করলেও তা কাজে আসেনি। কেননা, তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল, বাবা-মায়ের এই নজরদারি অসহ্য হয়ে ওঠে ঐশীর কাছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে যেমন ঐশী বলেছে, বাবা ছিল ব্যাকডেটেড। আমার সঙ্গে তার ম্যাচ করত না। আর মা আমার সব কথাই বাবাকে বলে দিত। কোনো ফ্রিডম ছিল না। আমি বোর হয়ে গিয়েছিলাম।

এই ‘বোর’ (বিরক্ত) থেকে নিস্তার পেতেই একদিন বাবা-মায়ের কফিতে ঘুমের ওষুধ মেশায় সে। ঘটনার দিনও তা-ই করেছিল। তবে এবার আর এখানেই থেমে থাকেনি ‘স্বাধীনতাপ্রত্যাশী’ ঐশী। বন্ধুদের সাহায্যে নিজের জন্মদাতা ও জন্মদাত্রীকে চিরদিনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট রাতে রাজধানীর চামেলীবাগের বাসায় ওই হত্যাকাণ্ডে ঐশীকে সহযোগিতা করে তার দুজন বন্ধু। এরপর পালিয়ে যায় ঐশী। ছোট ভাই ওহী রহমান আর কাজের মেয়ে সুমীকে নিয়ে রিকশায় করে বিকেল পর্যন্ত এখানে-ওখানে ঘোরে; রাতটি কাটায় রিকশাওয়ালার বাসায়। সকালে পত্রিকায় বাবা-মার লাশ উদ্ধারের খবর দেখে রমনা থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে ঐশী।

পুলিশের ভাষ্যমতে, কোথাও নিরাপদ আশ্রয় না পেয়ে ঐশী পুলিশের কাছে ধরা দেয়। আর এরপর থেকেই কারাগার ও আদালতে যাতায়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে পুলিশ কর্মকর্তার আদরের মেয়েটির জীবন।

আদালত সূত্র জানায়, প্রথম দিকে আদালতে ঐশীকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখালেও কিছুদিনের মধ্যে তা কাটতে শুরু করে। একসময় স্বাভাবিক হয়ে আসে তার আচরণ ও চলাফেরা।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, মামলাটি এখানে আসার শুরুতে আদালতে ঐশীর মধ্যে কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি। কিন্তু মামলার সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর থেকেই তাকে অনমনস্ক ও উদ্বিগ্ন দেখা যায়। এ ছাড়া এ সময়ে তার স্বাস্থ্যও ভেঙেছে অনেক।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসার পর বিচার চলাকালে সপ্তাহে একদিন তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে নিয়মিত।

সর্বশেষ ৪ নভেম্বর ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ঐশীর উপস্থিতিতে মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এরপর আদালত মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১২ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেন। রায়ের দিন ধার্য হওয়ার পর ভীষণ উদ্বিগ্ন দেখায় ঐশীকে।

বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ঐশীকে এর আগে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছিল। আদালতে হাজিরার সুবিধার্থে পরে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।

পুলিশ দম্পতি হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ঐশী। পরে তা প্রত্যাহার করে এই দাবিতে যে, জোর করে তাকে স্বীকারোক্তি করানো হয়েছে।

তবে আত্মসমর্পণের পর পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী বলেছিল, আমি বাবা-মাকে খুন করিনি। আমার বন্ধু জনি ও জনির এক পরিচিত তাদের খুন করেছে। আমি শুধু কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিলাম। লাশ দুটি বাথরুমে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে গৃহকর্মী খাদিজা খাতুন ওরফে সুমি।
প্রতিক্ষণ/এডি/এআরকে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G